শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৫ অপরাহ্ন
তাড়াশ প্রতিনিধি: মিঠাপানির উপহ্রদ হিসেবে পরিচিত দেশের বৃহত্তম জলাভূমি চলনবিল। তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই বিলে এক সময় বছর জুড়েই পানি প্রবাহ থাকলেও বর্তমানে বর্ষা মৌসুমেই জৌলস ফিরে পায় বিলটি। পানির এই স্থায়িত্ব থাকে ২ থেকে ৩ মাস। স্থানীয়রা বলছেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও বিলের বুকে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে চলনবিল হারাচ্ছে তার চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য।
এছাড়াও অবাধে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহারে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ। প্রতিদিন আহরন হচ্ছে টনকে টন শামুক-ঝিনুক। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।
বিস্তৃর্ণ জলরাশির মাঝে দিগন্ত রেখায় সবুজের আলপনা। শান্ত জলরাশির সাথে ভেসে বেড়াচ্ছে শরতের সাদা মেঘের ভেলা। এরমধ্যেই ঢেউ ভেঙে ছুটে চলেছে নৌকা। রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ। বর্ষার স্বচ্ছ জলের সাথে প্রকৃতির যেন এক অপরূপ মেলবন্ধন। এটিই দেশের বৃহতম জলরাশি চলনবিল। যা সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলা জুড়ে বিস্তৃত।
প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই বিলটি বর্ষা এলেই এর বিশালতা বৃদ্ধি পায়। পানিতে টইটম্বুর হয়ে ওঠে পুরো বিল এলাকা। আর এই বিল কে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক লাখ মানুষ।
চলনবিল ঘুরে দেখা যায় মাছ ধরার বিচিত্র আয়োজন। বিলের উন্মুক্ত জলরাশিতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ বিলের প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার। জেলারা জানান, বানের পানি এলেও আগের মত আর দেশীয় মাছের দেখা মেলে না। রিং জাল, চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল সহ নিষিদ্ধ সব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার করায় হারিয়ে গেছে বাঁচা, গজার, ভেদা, সরপুটি, বৌপুটি,এ্যালং, চেক্যা, কড়ি কাইট্যা, কাছিম , ভোদর, জলকলা, গেচু, ভাত শোলা সহ মস, ফার্ণ ও শৈবাল সহ ৪০ থেকে ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ, জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ।
চলনবিলে মাছের সাথে বিলুপ্ত হচ্ছে বিলের জেলেদের পেশাও। জীবিকার তাগিয়ে অনেক জেলেই এখন শামুক-ঝিনুক ও কাঁকড়া নিধন করে বিক্রি করছেন মাছ ও হাঁসের খাবার হিসেবে। তাড়াশের কুন্দুইল এলাকায় প্রতিদিন বসছে শামুকের হাট। রাত ভর জাল দিয়ে শামুক নিধন করে এই হাটে প্রতি বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে ২শ থেকে ৩শ টাকায়। প্রতিদিন কয়েক টন শামুক সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
স্থানীয়রা বলছেন, চলনবিল এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে বিলের আকার। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও যত্রতত্র পুকুর খনন করায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চলনবিলের পানি প্রবাহের, পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে মাছ ও জলজ প্রাণী শিকার করায় দেশীয় মাছের উৎপাদন কমার পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে বিলের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, কোন ভাবেই চলনবিলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করা যাবেনা বলে । এর জন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেনতাও বৃদ্ধি করতে কাজ করতে হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মোকাররম হোসেন বলেন, দেশীয় মাছ পুণরুদ্ধারে চলনবিলে অভায়শ্রম তৈরির পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তবে নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চলনবিলে চায়না জালের সয়লাব সেই সাথে শামুক নিধরন করা হচ্ছে বিষটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক ।
চলনবিলের চিত্র-বিচিত্র, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সকলেই এগিয়ে আসবে এমটাই প্রত্যাশা বিল পাড়ের মানুষের।